March 28, 2023, 6:06 pm

ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জ্যঁ লুক গদার সেচ্ছায় মৃত্যু

নিউজ এ্য়াকশন, বিশ্ব সংবাদ :

কিংবদন্তি ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জ্যঁ লুক গদার মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ৯১ বছর বয়সে এই পরিচালক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে ফরাসি গণমাধ্যম। নিজের মৃত্যুর সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার দীর্ঘ দিনের আইনি পরামর্শদাতা প্যাটিক জঁনেরেত। তিনি জানান, ‘অ্যাসিস্টেড সুইসাইড’-এর মাধ্যমে নিজের জীবনের ইতি টেবেছেন এই কিংবদন্তি নির্মাতা। সুইজারল্যান্ডে বেশ কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিবেচনাধীনভাবে ‘অ্যাসিস্টেড সুইসাইড’ বা চিকিৎসকদের সহায়তায় জীবন নাশের সিদ্ধান্ত আইনত বৈধ।
বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবাদ সংস্থা এএফপিকে প্যাট্রিক জানিয়েছেন যে চিকিৎসকদের সহায়তায় নিজের জীবনে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোদার নিজেই। প্যাট্রিক বলেন, ‘‘(গদারের) মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী, একাধিক অক্ষম রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। সে কারণে স্বেচ্ছায় প্রস্থানের জন্য সুইজারল্যান্ডে আইনি সহায়তার নেওয়ার পথে এগিয়ে ছিলেন।’’
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর ফ্রান্সের ফ্রাঙ্কো-সুইস পরিবারে গদারের জন্ম। জন্মের চার বছরের মাথায় পুরো পরিবার সুইজারল্যান্ডে চলে যায়। সেখানেই শুরু হয় গদারের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন। এরপর ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্যারিসে ফিরে ঐতিহ্যবাহী লিসি বুফোন স্কুলে ভর্তি হন। এ সময় প্যারিসের বেশ কয়েকটি সিনেমার ক্লাবে তার অবাধ যাতায়াত শুরু হয়। এসব জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে তার পরিচয় হয় জ্যাকুয়েস রিভেটি, ক্লদ শ্যাব্রল, ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো প্রমুখ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের সঙ্গে। আর সে সুবাদে চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে নাম লেখান গদার। প্রকাশ করেন চলচ্চিত্র পত্রিকা গ্যাজেট দ্যু সিনেমা।
এরপর ১৯৫২ সালে সুইজারল্যান্ডে ফিরে যান গদার। সেখানে তিনি একটি বাঁধে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ নেন। এই কাজ করার সময়ই বাঁধটি নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের চিন্তা তার মাথায় আসে। সে অনুযায়ী ৩৫ মিমিতে তিনি নির্মাণ করেন অপারেশন কনক্রিট। এরপর একে একে অল দ্য বয়েস আর কলড প্যাট্রিক (১৯৫৭), চার্লট অ্যাট সান জুলস (১৯৫৮) ইত্যাদি।
গদারের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ব্রেথলেস (১৯৬০)। এই ছবিটিই তাকে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি এনে দেয় এবং ব্রেথলেসকে ধরা হয় নবতরঙ্গের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
গদারের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, দ্য লিটল সোলজার (১৯৬০), অ্যা উইম্যান ইজ অ্যা উইম্যান (১৯৬১), মাই লাইফ টু লিভ (১৯৬৩), কনটেম্পট (১৯৬৩), অ্যা মেরিড উইম্যান (১৯৬৪), পিয়েরে ল্য ফু (১৯৬৫), মেইড ইন ইউ. এস. এ (১৯৬৬), উইক অ্যান্ড (১৯৬৭), নিউ ওয়েভ (১৯৯০), জেএলজি/জেএলজি (১৯৯৪), গুডবাই টু ল্যাঙ্গুয়েজ (২০১৪) প্রভৃতি।
২০১০ সালে ফরাসি চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য বিশেষ অস্কার পান গদার। কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তবে ঠিক কি কারণে তিনি অস্কার নেননি তা পরিষ্কার নয়। অনেকের মতে, মূল অস্কার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত না হওয়ায় তিনি যেতে রাজি হননি। আবার অনেকে মনে করছেন, সবসময় হলিউডের সমালোচনা করা গদার অস্কারে না যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
২০১৮ সালে ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে গদারকে বিশেষ পাম দ’র দেওয়া হয়। ‘দ্য ইমেজ বুক’ সিনেমার জন্য তাকে সম্মানিত করেছিলো উৎসব কর্তৃপক্ষ। গদারের চলচ্চিত্র অনেক বিখ্যাত পরিচালকদের অনুপ্রাণিত করেছে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মার্টিন স্কোরসিসি, কোয়েন্টিন টারান্টিনো, ব্রায়ান ডি পালমা, স্টিভেন সোডারবার্গ, ডি. এ. পেনবেকার, রবার্ট অল্টম্যান, জিম জারমুশ, ভিম ভেন্ডার্স, বেরনার্দো বেরতোলুচ্চি ও পিয়ের পাওলো পাসোলিনি।



ফেসবুক পেজ