জিলাপী ভাজার মৌ মৌ গন্ধ আর বেলুন, বাঁশি নিয়ে ছোটদের ছুটোছুটি। মুড়ি মুড়কি আর স্থানীয় হস্ত ও কুটির শিল্পীদের তৈরী বাহারী তৈজসপত্রের পসরা যেন অন্যরকম করে ফুটিয়ে তুলেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামকে।
বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠিত মেলায় আসা সববয়সী মানুষ কিছু সময়ের জন্য হলেও ফিরে পায় গ্রামীণ জীবনের হারানো ইতিহাস ঐতিহ্যকে।
কোন একটি বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত মেলা শিশু কিশোরদের সাথে বড়দেরও মনকে প্রফুল্ল করে। দেশের স্বাধীনতা পূর্ব কালীন সময় আমিরন নামের এক পাগলী নারী পঞ্চগড় সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামে বসত গাঢ়ে। ঘন গাছপালা আর জঙ্গলে ঢাকা গ্রামটিতে তিনি নিভৃতে বাস করলেও মহরম মাসে আশুরার পরদিন তিনি সেখানে স্থানীয় লোকজনকে মহরমের মার্সিয়া গীত গেয়ে শোনাত। আমিরন পাগলীর মৃত্যুর পর স্থানীয়রা ওই গ্রামের সড়কের পাশে তাকে কবর দেয়। পরবর্তী সময় গ্রামের লোকজন ওই কবর জিয়ারতের পাশাপাশি মনের আশা পূরণের জন্য মানত করতো। অনেকের ইচ্ছা পূরণও হয়। দিনে দিনে খ্যাতি ছড়ায় গোটা জেলা শহরে।
তবে আমিরন পাগলী কবে গ্রামটিতে আসেন ও কবে মারা যান সে সম্পর্কে স্থানীয়রা সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য জানাতে না পারলেও আশুরার পরদিন পাগলী বাজার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আতাউর সময় সংবাদকে জানান, বংশপরম্পরায় এ মেলার গল্প তিনি শুনে এসেছেন। গ্রামীণ মেলার বৈচিত্র্যময় আয়োজন দেখানোর জন্য তিনি তার মেয়ে ও আত্মীয়দের নিয়ে মেলায় এসেছেন।
স্কুল শিক্ষার্থী মিনহাজ, মুরসালিন, ফয়সাল সময় সংবাদকে বলেন, মেলায় তাদের পছন্দের অনেক রকমের পণ্য সামগ্রী কিনতে পারায় দারুণ খুশি।
স্থানীয় গ্রামের বকুল সময় সংবাদকে জানান, তিনি তার বাবা দাদার মুখে শুনেছেন এখানে আশুরার পরদিন মেলার আদলে একদিনের জন্য বাজার লাগে। অনেকে মানত করে উপকৃতও হন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মনোয়ার হোসেন দিপু সময় সংবাদকে বলেন, করোনাকালীন সময় মেলা বন্ধ থাকলেও এবার স্থানীদের দাবীর প্রেক্ষিতে শতবছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য গ্রাম পুলিশসহ স্থানীয় তরুণ যুবকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলা পাগলী মেলার আয়োজন আরও সুন্দর ও স্থানীয় কুটির ও মৃৎশিল্পীদের তৈরী তৈজসপত্র প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য মেলার পরিধি বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।